• রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

১২ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন

অনলাইন ডেস্ক : / ৯১ বার দেখা
আপডেট : রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

শিক্ষা খাতে বড় পরিবর্তন আসছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়ন করার মহাপরিকল্পনা রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। শিক্ষা খাতে এক ডজনেরও বেশি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে প্রথমবারের মতো কর্মপরিকল্পনার খসড়া ইতিমধ্যে তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। গত ৩ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। এর পরও নিশ্চিত হয়নি শিক্ষার গুণগতমান। রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা সংকট।

শিক্ষা খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে পাহাড়সম অনিয়ম আর দুর্নীতি। মন্ত্রণালয়ে এক শ্রেণির কর্মকর্তা অর্জিত ক্ষমতাবলে নথি নিষ্পত্তি না করে দুর্নীতির পথ সৃষ্টি করেন। পূর্ত কাজে দরপত্র থেকে শুরু করে নানা পর্যায়ে আছে অনিয়ম। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত অর্থ আদায় এবং কোচিং, অবৈধ বই ও গাইড বাণিজ্য তো রয়েছেই। শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারীদের সার্টিফিকেট জাল-জালিয়াতি বাণিজ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিদের অনিয়ম-দুর্নীতিসহ শিক্ষার এমন কোনো দপ্তর নেই, যেখানে দুর্নীতি নেই।

অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি-ট্রেজারার না থাকাসহ অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পাবলিক-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারকি করার কথা থাকলেও তারাও এ কাজ যথাযথভাবে করছে না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় আছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তত ৩৩টিতে এখন কোনো উপাচার্য নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক বিষয় দেখভাল করবেন সেই ট্রেজারার নেই অন্তত ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পরিকল্পনা কমিশন শিক্ষায় যেসব চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা কোনো অবকাঠামো নেই। ফলে বর্তমান প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই ২-৩টি কক্ষ এই কাজে ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রাথমিকে ভর্তির হার শতভাগ হলেও ঝরে পড়ার হার এখনো প্রায় ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। দেশে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৬৫ হাজার ৫৫৬টি সরকারি বিদ্যালয়, বেসরকারি মাদ্রাসা বা এনজিও নিয়ন্ত্রিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষিত শিক্ষক প্রয়োজন। বিদ্যালয় পরিচালনায় অভিভাবকরা সম্পৃক্ত হন না, যা মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের অন্তরায়। খসড়া প্ল্যানে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো অপেক্ষাকৃত কম ভর্তি হওয়া। বিভাগভিত্তিক শিক্ষার্থীদের ভর্তির এ ধারা উদ্বেগজনক। এছাড়া ভর্তির ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের ব্যবধান কমানো। উচ্চশিক্ষায় সরকারি কলেজে একই শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা দেওয়া এবং শিক্ষক সংকট। মানসম্মত শিক্ষক বিশেষ করে বিজ্ঞানের শিক্ষকের প্রকট সংকট রয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরতদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো একক নীতিমালা নেই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য মানসম্মত ফ্যাকাল্টি না থাকা। কারিগরি শিক্ষায় নারীদের কম অংশগ্রহণ ও চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা তৈরির অভাব।

শিক্ষাবিদরা যা বলছেন
পরিকল্পিতভাবে শিক্ষাকে একদম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এমন মন্তব্য করেন তিনি। অধ্যাপক মামুন লিখেছেন, ‘এত বছর ধরে শিক্ষকতা পেশাকে অনাকর্ষণীয় করে, নিয়োগ বিধিমালা ও দুষ্ট লোক দিয়ে নিয়োগ কমিটি ভরে মানহীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সমাজে একটা ধারণা তৈরি করা হয়েছে যে আমাদের শিক্ষকরা ভালো না। আমাদের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ায়, পার্ট টাইম পড়ায়, জনপ্রতিনিধি তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পেছনে ঘুরে, নিজেরা রাজনীতি আর সমিতি করে নানা গ্রুপিং ও তদবিরে ব্যস্ত। কথা পুরো সত্য। কিন্তু এই সত্য অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তৈরি করে শিক্ষাকে একদম ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

 

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ