• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০০ অপরাহ্ন

গরম কমাতে হিট অফিসারের পরামর্শ

অনলাইন ডেস্ক : / ১১৬ বার দেখা
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

দেশজুড়ে গরমের তীব্রতা বাড়ায় শনিবার (২০ এপ্রিল) থেকে চলছে তিন দিনের হিট অ্যালার্টের সতর্কতা। তাপপ্রবাহে হাঁসফাঁস অবস্থা দেশের প্রধান শহর ঢাকার বাসিন্দাদের। পরিস্থিতি যখন এমন- তখন স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কী করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন? এক বছর আগে দায়িত্ব নেওয়া বুশরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি কী কী করেছেন এবং গরম কমাতে শহরবাসীদের দিয়েছেন কিছু পরামর্শও। 

গত এক বছরে নিজেদের কাজ নিয়ে বুশরা বলেন, ‘‘দায়িত্ব পেয়ে আমরা বসে নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় যত দ্রুত সম্ভব আমরা তা নিয়েছি। নগরবাসীর সচেতনতা বাড়াতে ‘হিট অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন’ চলছে। নগরে গাছ লাগানোর পাশাপাশি তার পরিচর্যা নিশ্চিত করার বিষয়টিও আমরা দেখছি।’

বুশরা বলেন, ‘‘এ ছাড়া নগরের তাপমাত্রা ও দূষণ কমাতে ‘টু অ্যাবেল ফরেস্ট’ (দুটি বন করার চেষ্টা) তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। কল্যাণপুর ও বনানীতে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আমরা নগর বন তৈরি করতে যাচ্ছি। যা একই সঙ্গে শীতলীকরণ, বায়ুদূষণ রোধ এবং মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি করবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরসহ আরও কিছু সরকারি-বেসরকারি ও এনজিওর সঙ্গে আমরা যুক্ত হয়ে বেশ কিছু কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছি।’’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নিযুক্ত হওয়ার পর ঢাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন বলেন, ‘‘ঢাকায় পানীয় জলের সুব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছি। পাশাপাশি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘কুলিং স্পেস’ এর ব্যবস্থা করার জন্য সিটি করপোরেশনকে পরামর্শ দিয়েছি। যেন পথচারীরা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান।’’

শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গত এক বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বুশরা আফরিন বলেন, ‘ঢাকার অন্যতম প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ বস্তির জনগোষ্ঠী। তাদের মধ্যে তাপপ্রবাহের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছি। তাদের মধ্যে জনসচেতনতা বাড়াতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এর পাশাপাশি বস্তি এলাকায় গাছ লাগানোর মাধ্যমে তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এখন তারাই গাছের রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।’

তিনি বলেন, ‘সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে হিট মোকাবিলা করবো, এটাই আমার কাজ। তবে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করছি না, আমাকে সিটি করপোরেশনের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে প্রায় ৩০ মিলিয়নের বেশি মানুষের বসবাস, শহর খুব দ্রুত বড়ো হচ্ছে। পরিস্থিতিও খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, হিট নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে এখানে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন।’

অনুন্নত এলাকায় গরমের প্রকোপ বেশি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছর আমরা শহরের অনুন্নত অন্তত ১৫টি এলাকায় সবুজায়ন প্রোগ্রাম করেছি। যেখানে পাঁচ হাজারেরও বেশি বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সবুজায়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের আমরা বুঝিয়েছি, নিজে ও পরিবারের সদস্যদের কীভাবে তীব্র গরম থেকে বাঁচাতে পারবো।’

গত বছর হিট মওসুমে নিয়োগ হওয়ায় তখন বেশি কাজ করতে পারেননি জানিয়ে বুশরা বলেন, ‘কাজ শুরু করলে রাতারাতি পরিবর্তন হবে না। আস্তে আস্তে এই পরিবর্তনের ফল পাওয়া যাবে।’

মানুষকে সচেতন করতে একটি সহজ ভাষায় ছবি সম্বলিত বুকলেট প্রকাশের কাজ চলছে বলে জানান এই চিফ হিট অফিসার।

তবে পরিকল্পনা তিনি নিজে বাস্তবায়ন করতে না পারায় সময় বেশি লাগছে বলেও দাবি করেন। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ পেলেও টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করতে বেশি সময় লেগে যায়। এছাড়া আমলাতন্ত্রও কাজের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে জানান বুশরা।

বিদ্যমান পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হবে, এমন প্রত্যাশা করা উচিত হবে না উল্লেখ করে বুশরা জানান, সমালোচনার দিকে নজর না দিয়ে কাজ করেই সময় পার করছেন তিনি।

তাৎক্ষণিক গরম থেকে বাঁচতে বুশরার পরামর্শ

চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন তীব্র গরম থেকে বাঁচতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি চাইলেও একরাতে সব পরিবর্তন করে দিতে পারবো না। গরমে বেশি বেশি পানি পান ও শরীরের প্রতি নজর রাখতে হবে। যেহেতু এমন গরম আগে বাংলাদেশে ইতিহাসে হয়নি, তাই এই পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে আগের অভ্যাস বাদ দিতে হবে।’

তবে নগরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমাদের অবশ্যই আরও বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং পরিবেশ বান্ধব অবকাঠামো নির্মাণে এগিয়ে আসতে হবে, বলেন হিট অফিসার।

এদিকে তীব্র গরমে সারা দেশে আরও ৩ দিনের জন্য সতর্কতামূলক হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।

সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় জানানো হয়, চুয়াডাঙ্গায় রোববার (২১ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এদিন ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৮.২ এবং সর্বনিম্ন ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

বুশরা এশিয়ায় প্রথম চিফ হিট অফিসার। ২০২৩ সালের এপ্রিলে তাকে নিয়োগ দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অ্যাড্রিয়েন আরশট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টার। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিয়ামি, সিয়েরা লিওনের ফ্রিটাউন, গ্রিসের এথেন্স, চিলির সান্তিয়াগো, মেক্সিকোর মনট্রে ও অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে চিফ হিট অফিসার রয়েছে। বুশরার মতো তারা সবাই নারী। তাদের লক্ষ্য, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ১০০ কোটি মানুষকে চরম তাপমাত্রা থেকে রক্ষা করা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ